সমস্ত লেখাগুলি

চুপি পাখিরালয় -
অজিত মিত্র
Nov. 18, 2024 | ভ্রমণ | views:883 | likes:74 | share: 0 | comments:0

  ঘরে বসে আছি,হটাৎ সৌরভের ফোন, দাদা যাবেন নাকি চুপিতে, আমিতো যাব বলে কথাটা লুফে নিলাম। সুশান্ত, আমার পরিচিত পাখি প্রেমী,ওকে বললাম, সাথে সোরভ কেও বললাম রাজি।

পরদিন ভোর ৬ টায় বিরাটি মোর এসে সৌরভের গাড়িতে চেপে বস্ লাম আমরা ৩ জনে, কল্যানী এক্সপ্রেস ওয়ে ধরলাম, কিছু বাদে সোদপুর মোড়, চা এর বিরতি। ডিসেম্বর মাস, বেশ ঠান্ডা লাগছে,চা খেয়ে গাড়ীতে উঠে পড়লাম,গাড়ী চলতে লাগল, দুপাশে দেখতে দেখতে চলা, সাম নেই রাস্তার ধারে বাজার, বহু মানুষ রাস্তা পারা পার করে বাজার করছে, গাড়ি থামাতে হল,  আবার চলা, কিছুটা যাবার পর বাদিকে ধান খেত, বেশ লাগছে দেখতে, একটু গিয়ে ডানদিকে ফুল কপি, পালংশাকের খেত, অনেকটা জুরে চাষ  করেছে, ফেরার সময় কিনব, যদি মনে থাকে।  এরই মধ্যে কালনা তে এলাম,কিছু খেয়েনিলাম। আমি ক্যামেরা নিয়ে এদিক ওদিক ছবি তুলছিলাম দেখে কয়েকজন উৎসুক হয়ে বলল আপনারা কি কাগজের লোক? আমি হেসে ফেলে বললাম না, আমরা পুরবস্থলিতে যাচ্ছি পাখি দেখতে, ওরা অবাক! পাখি দেখতে কলকাতা থেকে এতদুরে??দোকান দার ওদের কথায় বাধা দিয়ে বললেন যে ওখানে গংগা নদীতে বিরাট চড় আছে, সেখানে অনেক বিদেশী পাখি আসে, ওনারা ওইখানে যাচ্ছেন মনেহয়।হেসে বললাম ঠিক বলেছেন। চা খেয়ে ওখান থেকে সামনের দিকে এগিয়ে চললাম, কিছু পরে পারুলিয়া মোরে এলাম। যেখান থেকে পুরবস্থলি হয়ে আমাদের গন্তব্য স্থলে যাওয়া।এই চুপি পাখিরালয় দিনে দিনে বেস আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছ, ফলে বাড়ছে পরযটকদের ভির। বেশ কিছু আবাস গড়ে উঠেছে, মুড়ি গঙ্গার তীর বরাবর, আবাসের বারান্দা থেকে পরিযায়ী পাখিদের দেখতে পাওয়া যায়। একটা প্রজাপতি পারক গড়ে উঠছে। দেখলাম খুব বড় বড় আমবাগান,আবার বেস কিছুটা চাষের খেত। মাটির রাস্তা, দুপাশে মাটির বাড়ি,ভালোই লাগছিল। গাড়ি থেকে নামা মাত্রই নবি বক্স বাবু এগিয়ে এলেন তার ঔষধের দোকান থেকে,এখানে খুবই পরিচিত লোক, এখানে যারা আসে, সবাই ইনার সাথে যোগাযোগ করে আসে, পাখি প্রেমী। থাকা খাওয়, নৌকায় ঘোরা, সাথে গাইড, সব যোগাযোগ করে দেন, আমরা শুভেচছা বিনিময় করলাম, যেখানে থাকব, সেখানে নিয়ে গেলেন।আমরা তাড়াতাড়ি ব্যাগ পত্তর নামিয়ে সবাই ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। সামনেই ছোট্ট একটা বাজার, সপ্তাহে একদিন হাট বসে, বেস কয়েকটা দোকান আছে, খাবারের দোকান, মিস্টির দোকান ও দেখলাম। নবি বাবু বললেন এখন এদিক ওদিক ঘুরে ছবি তুলুন, দুপুরে খাওয়ার পর গাইড আসবে, ১টার মধ্যে বেড়িয়ে পড়ব। এখানে দুটো সেশন, সকাল ৬টা ---১১ টা, আবার ১টা ---৫ টা। তবে চাহিদানুযায়ী সময়ের পরিবর্তন হয়।যদিও সবটা নদিতে, অবশ্য ভ্রমন বা পাখি দেখা কিন্তু গংগা বক্ষে, একটা ব্যাপার, এখানেও দেখলাম সভ্যতার অসুখ, নদীর ধারে আম বাগানে বন ভোজন হচ্ছে, খুব জোরে ডি যে সহ গান, নাচ চলছে। রান্না বান্না চলছে কাঠ জ্বালিয়ে, বেস কয়কটি দল রয়েছে। আধপোড়া কাঠ এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এবং এঠো কাটা সহ খাবার, থারমকলের থালা, তরকারির চোকলা সমেত চারদিকে ছড়ানো, একটা আধা নরকের মত অবস্থা, বললাম এই অবস্থায় পাখি আসবে কি করে?  জানলাম এখানে একটা পক্ষি সমিতি আছে, নবি বাবুও যুক্ত, বলেন প্রশাসন কে বলেছিলাম, কিছুদিন বন্ধ  ছিল, আবার চালু হয়েছে,  কেউ কিছু বলার নেই। অবশ্য আশাকরি আগামী দিনে সুস্থ পরিবেশ ফিরে আসবে। এদিকে আমরা ১টার মধ্যে হাটের কাছে চলে এলাম, আমাদের সাথে পাখি ভাল চেনে যে, তার সাথে পরিচয় হল, নাম তপন। নদীর  পাড়ের  দিকে যেতে গিয়ে বেশ কিছু বাড়ি ঘড় দেখলাম, বেশিরভাগ ক্রিশি জীবি।নোউকা অপেক্ষা করছে, নদীর পাড় বেশ উঁচু  খাড়াই পথ, ঢাল বেয়ে নামতে হবে, এই বুঝি নদীতে পড়ে যাব,  নৌকায় ওঠার পর চালাতে  লাগলো বইঠা  সহকারে অবশ্য বড়ো লগিও আছে, আমরা  মুল নদীতে না গিয়ে,   নদীর পাশেই একটা বড়ো জলাশয়ে ঢুকে পড়লাম, কিছুটা কচুড়ি পানা আছে, আমরা কিছুটা দুরত্ব রেখে চললাম, কারন সাপের উপদ্রব আছে, অনেক বাশের কঞ্চি পোতা রয়েছ, দেখলাম মাছরাংয়া(বুক সাদা), প্যারেড কিংফিশার, ক্যাটেল ইগ্রেট, রাংয়া মুড়ি, ভারি সুন্দর দেখতে, মাথাটা লাল এবং গোলাপি ঠোঁট, ক্যামেরার খচাখচ আওয়াজে উড়ে যাচ্ছে, সৌরভ কেমন হল, মনের মতো হলনা অজিত দা, রাংয়া মুড়িটা কচুরিপানার উল্টা একদিকে গিয়ে বসলো।গাড়ী হলে ঘুড়িয়ে নেওয়া যেত, নোউকার সময় লাগবে, যেতে যেতে পালিয়ে যাচ্ছে।সাম নের দিকে কয়েকটি পারপেল সোয়ান হেন দেখলাম, রোগা লম্বাটে, কি সুন্দর জলে সাতার কাটছিলো পেখম তুলে।অদ্ভুত ধরনের পাখি, না দেখলে ভাবা যায়ন। জল ময়ুর  বলে, রাজারহাটে একটা জলাশয়ে দেখেছিলাম। বিকাল হল, এখানে শেষ করে ঘরে ফিড়ে এলাম। পরদিন সকাল ৬ টার আগে তৈরি হয়ে বাইর এসে চায়ের দোকান খোলা দেখে চা খেয়ে নিলাম, ভালো চা, নদীর পাড়ে গিয়ে নৌকাতে উঠলাম। মূল নদীতে প্রবেশ করলাম, বেস স্রোত। একটা শুশুক দেখলাম, উঠছে আর ডুব দিচ্ছে।অনেক দুর অব্দি আমাদের সাথে ছিলোএকটু ভয় পেয়েছিলাম, এতো কাছ দিয়ে যাচ্ছিল, বেস বড়। ভাবলাম নৌকা না উল্টিয়ে দেয়, মাঝি বলল কিছু হবে না।দুরে দেখতে পাচ্ছি নদীর মাঝখানে লম্বা ধরনের বিশাল দ্বীপের মত, ওরা বলল ওই টাই চড়। ওদিকে একঝাক রুডিশেল ডাক- সুদুর লাদাখ থেকে আসে, ভাবাযায়  কত শত মাইল পারি দিয়ে আসে, ওদের ডাক দুর থেকে শোন যাচ্ছে, কিছুটা ধারের দিকে এলাম, দেখলাম প্যারেড কিং ফিশার, সাথে লেসার হুইসেল ডাক ও গ্রে হেরন, ক্যাটেল ই গ্রেট, এবার চড়ের উপর উঠলাম, একটু হাল্কা হয়ে নিলাম সবাই, সাম নে দেখলাম দুটি লোক ঝগড়া করছে, কার কতটা জমি। আমি বললাম মিলে মিশে চাষ কর, কিছুদিন বাদেই ডুবে যাবে, তখন কি করবে হাসলো ওরা। চরে হাটছি, হটাত এক ঝাক পাখি উড়ে গেল, মাটির রঙের সাথে মিশেছিল, চড়াই পাখির মতন, বলল বাবুই বাটান, অত পাখি উড়ছে বসছে, বেশ লাগছে কমন কিং ফিশার দেখলাম, বেলা হয়ে এলো নৌকায় উঠলাম, স্রোতের উল্টা দিকে চলা, কিছুটা আড়া আড়ি ভাবে চলতে লাগলাম, কি ভাবে নদীরপাড় ভাংছিল ভয় লাগছিলো, ধপাস ধপাস করে জলে পরছিল মাটির চাক গুলি। একটা মজার ঘটনা চোখে পড়ল,একটা কিং ফিশার, বাটা ধরনের মাছ ধরেছে,ওর থেকে আকারে বর, মাছটা নড়ছে আর ও মাথা ঘুরিয়ে পাশের ডালে আছার মারছে একাধিক বার, দারুন লাগল। বেস হাশিও পেল খাওয়ার ধরন দেখে। মাছটা মড়বে,নরম হবে, তখন ও গিলবে।  এক সময় আমরা তীরে এসে গেলাম, গাইড মাঝি ওদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিলাম, আমরা লজে এলাম, পরদিন ঠিক করেছিলাম, যে এই গ্রামটা শুধু পাখিরালয় নয়,মহা মনীষীদের জন্মভুমি, আমরা সেই ইতিহাস কে ছুয়ে যাব। এই চুপি গ্রামে জন্মেছিলেন অক্ষ্য়কুমার দত্ত ও তার নাতি কবি সত্যেন্দ্র নাথ দত্ত।গেছিলাম দেখতে, খুব পুরানো বাড়ি। আরেকজন ভারতীয় ভাষা, দরশন, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে  মহা পন্ডিত শ্যামদাস বাচস্পতি এখানে জন্মেছিলেন১৮৪৯ সালে, বারির সামনে ফলকে লেখা।  কালাজ্বরের ওষুধ আবিষ্কার করে  বিখ্যাত উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী, সারা পরে গেছিল দেশজুরে। এই গ্রামেই জন্ম। আরও অনেকেই আছেন। পাখিরালয় দেখার সাথে ওইতিহাসিক স্থানগুলি দেখে নিলে বেশ ভাল লাগবে। একটা কথা ওখানে ভাল পাটালিগুড় পাওয়া যায়, কিনতে কেউ ভুলবেন না।    

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86933